বাল্যকালে আমরা সবাই গোল্লাছুট খেলতাম মনে আছে নিশ্চয়। এই খেলার একটি নিয়ম ছিল যে দম দিত সে কাউকে ছুঁয়ে দিলে সে মরে যেত (মানে মাঠের বাহিরে চলে যেত)। এভাবে একসময় সবাই মরে যেত খেলাও শেষ হয়ে যেত।
এখন ঠিক সেই গোল্লাছুট খেলার মতো আমরা এমন একসময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যখন মানুষগুলো সবসময় আতংকের মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। কারণ আমরা জানি না কে কখন কোন সময় কীভাবে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে পড়ি।
আমরা ছোটবেলা থেকে ভাইরাসের সঙ্গে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের কথা শুনে আসছি। তবে এবার একেবারে নতুন ধরনের ভাইরাসের পাল্লায় পড়েছি। এই ভাইরাসটি এত রহস্যজনক যে প্রতিনিয়ত তার রূপ পরিবর্তন করে চলেছে। নভেল করোনাভাইরাস গোষ্ঠীর ভাইরাসটির পোশাকি নাম কোভিড-১৯।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে প্রতিদিন সংক্রমিত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। কেড়ে নিচ্ছে অজস্র প্রাণ। তবে কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় কোভিড-১৯ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বের সব মানুষই আজ উদ্বিগ্ন। এই ভাইরাসের কাছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা বলে আলাদা করে কেউ নেই।
আমাদের মনে নানাবিধ প্রশ্নের উদয় হয় যে করোনাভাইরাস কোথা থেকে উৎপত্তি হয়েছে? এই ভাইরাস কিভাবে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল? প্রাণ সংহারক এই ভাইরাস থেকে নিজেকে বাচানোর উপায়ই বা কি? কতটুকু দূরত্বে থাকলে এর থেকে বাচা যাবে?
বলা বাহুল্য যে এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর কিন্ত আপাতত মিলছে না। ফলে সবচেয়ে সহজ এবং সাধারন উত্তর হলো- যতটুকু সম্ভব ঘরের বাইরে না যাওয়া। সম্ভব হলে সারাক্ষণই ঘরে অবস্থান করা। সচেতন ও সচেষ্ট থাকলেই পরিবারের সকলকে নিয়ে আমরা এই ভাইরাসের কবল থেকে বাঁচতে পারি।
আমরা বাঙালিরা বীরের জাতি। আমরা কোনও কিছুকে ভয় পাই না। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ ধরনের কথা খাটে না। কোভিড-১৯ এর হাত থেকে রক্ষা মিলছে না পৃথিবীর শক্তিধর দেশগুলোরও। অদৃশ্য শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য শক্তি কোনও কাজে আসে না।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিজ্ঞানীরা উঠে পড়ে লেগেছেন করোনাভাইরাস ঠেকানোর প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টায়। তবে প্রতিনিয়ত করোনাভাইরাস তার জিনের পরিবর্তন আনার কারণে বিজ্ঞানীরাও তাদের গবেষনার ধরন বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। এই শত্রু এমন যে তার মোকাবেলা করতে প্রচন্ড মেধা ও জ্ঞানের শক্তিকে কাজে লাগিয়েও সাফল্যের কিনারে পৌঁছুতে বেগ পেতে হচ্ছে।
অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা গেছে, এ ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরে এক ধরনের এন্টিবডি তৈরি হয়। যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী তার শরীরে এ এন্টিবডির প্রভাবে তেমন কোনও ক্ষতি করতে পারে না ভাইরাস।
কিন্তু যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তাদের বেলায় এই ভাইরাস মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষ করে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, উচ্চরক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের বেলায় এই ভাইরাসটি মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। যেসকল কারণে আমাদের ঘরে থাকা ছাড়া বিকল্প কোনও সমাধান আপাতত নেই। কারণ আমরা জানি না যে লোকজনের মধ্যে কে তার নিজের অজান্তে হলেও ভাইরাসটি বহন করছে।
সুতরাং আমরা কে কীভাবে কখন সংক্রমিত হয়ে যাব যখন বলার উপায় নেই তখন নিজেদের বাঁচাতে ও অন্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে নিজেদেরই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে নিতে হবে। এই জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নির্দেশনা সমূহ আমাদের মেনে চলতে হবে। দেশের নিয়ম-কানুন মেনে চলা নাগরিক হিসেবে আমাদের অবশ্য কর্তব্য।
আসুন দেশের এই দুর্যোগকালে ‘মানুষ মানুষের জন্য’ বাক্যটিকে আমরা বাস্তবে প্রতিপালন করার চেষ্টা করি। আমরা একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে জীবনযাপন করি। নিজেও বাঁচি এবং অন্যকেও সুস্থভাবে বাঁচার সুযোগ করে দিই।
এসময়ে প্রতিবেশিরা কেমন আছেন, পাশের বাড়ির মানুষগুলোর দুই বেলা দুই মুঠো খাবার জুটছে কি-না সেই খবর নিই। নিজেদের সাধ্য মতো নিরন্ন মানুষের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করি। বিন্দু বিন্দু জলে যেমন মহাসিন্ধু হয় তেমনি অল্প অল্প সহযোগিতায় এদেশের আপামর দরিদ্র মানুষগুলোর মুখেও হাসি ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।
সরকার তার সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার সঙ্গে আমরা সবাই মিলে যদি সম্মিলিতভাবে আমাদের হাত প্রসারিত করি তাহলে এই মহামারী থেকে আমরা বেঁচে যাবো। কারণ দেশকে করোনামুক্ত করতে দায়টা আমার আপনার আমাদের সকলেরই।
মোঃ কানিছুর রহমান
উপ-রেজিস্ট্রার, মাওলানা ভাসানি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল।